প্রচলিত মার্কেটিং পদ্ধতি থেকে সরে এসে মানুষ এখন তাদের ব্যবসায়ের প্রসার করার জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং-এর ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। একারণে Digital Marketing সেক্টরের গুরুত্ব প্রতিনিয়ত অনেক বেড়েই চলেছে। 

প্রচলিত এবং পুরনো ধাচের মার্কেটিং পদ্ধতিতে কাস্টমার এর নিকট পৌঁছানো এবং বিক্রয় বৃদ্ধি করতে অনেক সময়ের প্রয়োজন হয়। কিন্তু, অনলাইনে ইন্টারনেট মার্কেটিং এর সহযোগিতায় পুরো বিশ্বে অল্প সময়ের মাঝে অধিক পরিমাণ কাস্টমার এর নিকট বিজ্ঞাপন দেয়া এবং ব্যবসায়ের বিক্রয় বৃদ্ধির মাধ্যমে ব্যবসায়ের প্রচার ও প্রসার বৃদ্ধি করা সম্ভব। ঠিক এ কারণেই ডিজিটাল মার্কেটিংকে ঘিরে তৈরি হচ্ছে নতুন সব কর্মক্ষেত্র। 

আমরা সবাই কমবেশি জানি ডিজিটাল মার্কেটিং এর ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। এই পোস্টে আমি আপনাদের সাথে কোন কোন ডিজিটাল মাধ্যম গুলোর মধ্যে ধরনের প্লাতফর্মের এর চাহিদা বাড়বে ও ক্যারিয়ার হিসেবে এটি কেমন হবে এই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। তো চলুন, শুরু করা যাক।

ডিজিটাল মার্কেটিং এর ভবিষ্যৎ কি

ডিজিটাল মার্কেটিং এর ভবিষ্যৎ কেমন হবে

২০২০ সালের এক গবেষণায় দেখা যায় ডিজিটাল মার্কেটিং-এর মার্কেট ভ্যালু প্রায় ৩৬০-৩৮০ বিলিয়ন। ২০২৩ সালের শেষে এর মার্কেট ভ্যালু ৪.২ ট্রিলিয়ন বেড়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।দিন দিন ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের সেক্টর আরও ভ্যালুএবল হয়ে চলেছে। প্রতিনিয়ত অসংখ্য ব্যবসা তৈরি হচ্ছে। তাই নতুন নতুন চাহিদা সৃষ্টি হচ্ছে ওএতে করে এই সেক্টরের মার্কেট ভ্যালু প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। Statista - র মতে ২০২৭ সালে এটি US$910.30bn এ পৌঁছাবে। 

 ব্যবসা ক্ষেত্রে ডিজিটাল মার্কেটিং-এর ভবিষ্যৎ

ইন্টারনেটের ব্যাপক ব্যবহার বৃদ্ধি, মোবাইল ডিভাইসের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার বৃদ্ধি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং মেশিন লার্নিং (ML) এর বিকাশ অতি দ্রুত হওয়ার কারণে বর্তমানে ডিজিটাল বিপণন এর চাহিদাও প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে। 

  • ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে স্বল্প খরচে বিশ্বব্যাপী প্রচুর পরিমাণে গ্রাহকের নিকট বিজ্ঞাপন দেয়ার মাধ্যমে বিক্রয় বৃদ্ধি করা যায়।
  • ডিজিটাল প্রযুক্তি ভিত্তিক নতুন অনেক ব্যবসায় গড়ে উঠছে। তাই, অনেক কাজের ক্ষেত্র সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে, ডিজিটাল মার্কেটিং জানে এমন মানুষদের চাহিদা তাই দিন দিন বেড়েই চলেছে।
  • গ্রাহকের কাছে প্রচার বা মার্কেটিং করার জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং এর সুবিধা অনেক তাই পণ্য ক্রয় ও বিক্রয়ের জন্য এটি জনপ্রিয় হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।
  • ব্যবসায় মালিকরা তাদের ব্যবসায়ের প্রচার অতি দ্রুত এবং স্বল্প খরচে করার জন্য অনলাইন মার্কেটিং বেঁছে নিচ্ছেন। তারা অনলাইনে তাদের ব্র্যান্ড বা প্যন্যের প্রচারণা চালাতে বিনিয়োগ করছেন। তাই, প্রতিটি সেক্টরেই নতুন নতুন কাজের ক্ষেত্র সৃষ্টি হচ্ছে।

চাকরি এবং ক্যারিয়ার এর ক্ষেত্রে অনলাইন মার্কেটিং এর ভবিষ্যৎ

ডিজিটাল মার্কেটিং ইন্ডাস্ট্রিতে চাকরির সুযোগ বাড়ছে

অনলাইন মার্কেটিং এর ভবিষ্যৎ ভালো কারন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে এই ক্ষেত্রে বিনিয়োগ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে চাকরির সুযোগ কতটা বৃদ্ধি পাচ্ছে সেটা আপনারা নিজেরাই বুঝতে পারছেন।

  • বর্তমান সময়ে লোকাল কোম্পানি গুলোতে প্রতিনিয়তই ডিজিটাল মার্কেটিং এক্সপার্ট নিয়োগ দেয়া হচ্ছে পাশাপাশি ইন্টারন্যাশাল মার্কেটেও ডিজিটাল মার্কেটিং করে টাকা আয় করা যাচ্ছে। যার চাহিদা আরো বৃদ্ধি পাবে। 
  • যেমন - সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন এর চাহিদা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। কারণ, এখন অধিকাংশ নতুন এবং পুরাতন ব্যবসায় তাদের বিক্রয় বৃদ্ধির জন্য ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করছে। নিজেদের ব্যবসায় সম্পর্কে বিশ্বের কাছে প্রচার করার জন্য সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। এই মার্কেটিং শিখতে পারলে নিজের ব্যবসা, চাকরী, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ও ফ্রিলান্সিং করে টাকা আয় করা সম্ভব।   
  • এই সেক্টরে দক্ষ হতে পারলে যেকোনো অনলাইন মার্কেটপ্লেসে ফ্রিল্যান্সিং করতে পারবেন। ডিজিটাল ব্যবসায় প্রচলন বৃদ্ধি হওয়ার কারণে এই সেক্টরে প্রচুর পরিমাণে ডিমান্ড তৈরি হচ্ছে। তাই, ডিজিটাল মার্কেটিং জানেন ও দক্ষ এমন মানুষের চাহিদা বেড়েই চলেছে।
  • এই সেক্টরের মার্কেট ভ্যালু প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে। এই সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়তে হলে অবশ্যই দক্ষ হতে হবে।
  • তবেই, ডিজিটাল মার্কেটার হয়ে প্রচুর পরিমাণে অর্থ উপার্জন করা সম্ভব হবে। এছাড়াও, ফেসবুক অ্যাডস, সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং, কন্টেন্ট মার্কেটিং এর চাহিদাও প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে।

ডিজিটাল মার্কেটিং এর কিছু সম্ভাব্য ট্রেন্ড  প্রবণতা নিম্নরূপ

AI ও ChatGPT- র ব্যবহার

ডিজিটাল মার্কেটাররা গ্রাহকদের আরও ভালভাবে বোঝার জন্য ডেটা এবং অ্যানালিটিক্স ব্যবহার করার জন্য আরও অগ্রসর হবেন। এর ফলে ভবিষ্যতে ডিজিটাল মার্কেটিং এর কৌশল আরও কার্যকরী হবে। যার ফলে বিক্রয় বৃদ্ধি করা অনেক সহজ হয়ে যাবে।

জনপ্রিয় ফ্রি এআই টুল হল ChatGPT এবং GPT-4 (পেইড) , যা  টেক্সট বা লিখিত কন্টেন্ট (কৌতুক থেকে শুরু করে মুভির জন্য স্ক্রিপ্ট লেখা ) তৈরি করতে পারে। DALL-E  AI টুলটি টেক্সট প্রম্পটের উপর ভিত্তি করে ছবি তৈরি করতে পারে। ডিজিটাল বিপণনকারীরা স্টক ফটো ব্যবহার করার পরিবর্তে অ্যাড, ব্লগ এবং ল্যান্ডিং পেজের জন্য ছবি তৈরি করতে এটি ব্যবহার করতে পারে। মার্কেটিং কার্যক্রম আরও কার্যকরী এবং সহজ করার জন্য নতুন প্রযুক্তি এবং কৌশল ব্যবহার  হবে। এর ফলে আরও দক্ষ মার্কেটিং সেক্টর তৈরি হবে।

শর্ট-ফর্ম ভিডিও 

TikTok ভিডিও নিঃসন্দেহে গত বছরে সবচেয়ে জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া। তারা এতটাই সফল হয়েছিল যে অন্যান্য অনেক বড় অনলাইন বিজনেস ও social platform এই স্টাইলটি কপি করেছে। গত কয়েক বছরে, আমরা Instagram Reels, পরে Facebook রিলস , YouTube Shorts, এমনকি Twitter-এর কে শর্ট-ফর্ম ভিডিও তে ফোকাস করতে দেখেছি।

মাল্টি-চ্যানেল সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠবে। কারন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে । এই প্লাটফর্ম ব্যবহার করে গ্রাহকদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে, পণ্য এবং সেবা প্রচার ও বিক্রয় করা যায়। 

মাত্র কয়েক বছর আগে,  Facebook ছাড়া অন্যান্য প্ল্যাটফর্মগুলোতে ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কে মানুষের খুব বেশি আগ্রহি ছিল না। যে প্ল্যাটফর্মটি ইদানীং সবচেয়ে বেশি মনোযোগ পাচ্ছে তা হল TikTok। 

মার্কেটিং ও ক্লাইন্ট সাপোর্টের ক্ষেত্রে অটোমেশন 

কন্টেন্ট মার্কেটিং, ইমেইল মার্কেটিং এ অটোমেশন ইতোমধ্যেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একটি এআই-চালিত চ্যাটবট ক্লায়েন্ট এবং গ্রাহকদের একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা প্রদান করতে সক্ষম। এর ফলে কম খরচে ক্লাইন্ট সাপোর্ট ও মার্কেটিং পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে। 

ডিজিটাল মার্কেটিং এর ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হওয়ার উপায়

উপরের আলোচনা থেকে বুঝতে পেরেছেন ডিজিটাল মার্কেটিং এর মার্কেট ভ্যালু বৃদ্ধি হচ্ছে, অনেক চাহিদা সৃষ্টি হচ্ছে। তাই, এই সেক্টরে প্রতিযোগিতাও প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই সেক্টরে টিকে থাকতে হলে আপনাকে অবশ্যই আপ টু ডেট থাকতে হবে। এছাড়াও, আরও অনেক বিষয় জানতে হবে। এমন কিছু বিষয় নিচে উল্লেখ করে দিয়েছি।

  • ট্রেডিশনাল মার্কেটিং এর মত ডিজিটাল সেক্টরে টিকে থাকতে এবং এই সেক্টরে ক্যারিয়ার করতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই এক্সপার্ট হতে হবে। যদি এই সেক্টরে দক্ষ হতে পারেন, তবে সব ধরণের প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে টিকে থাকতে পারবেন। বিস্তারিত জানতে পড়ুন - ডিজিটাল মার্কেটিং কিভাবে শুরু করব
  • নতুন প্রযুক্তি, টেকনোলজি বিষয়ে সর্বদা আপ টু ডেট থাকতে হবে। এতে করে, নতুন নতুন সুযোগ হাতছাড়া হবে না এবং ক্লায়েন্ট এর জন্য সর্বোত্তম পন্থায় মার্কেটিং করে বিক্রয় বৃদ্ধি করে দেয়া সম্ভব হবে।
  • ফ্রিল্যান্সিংকে মার্কেটপ্লেসের মাঝে সীমাবদ্ধ না রেখে সেটিকে ব্যবসায় রুপান্তর করতে হবে। এজন্য, টিম তৈরি করতে পারেন। এতে করে, একের অধিক সেবা একই সময়ে দেয়া সম্ভব হবে। ফলে, প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকা সহজ হবে।

উপরোক্ত বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে পারলে একজন Digital Marketer হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে এবং প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে পারবেন। ডিজিটাল মার্কেটিং এর সেক্টর ইতোমধ্যেই অনেক ডিমান্ডেবল হয়ে উঠছে যা প্রতিনিয়ত আরও বৃদ্ধি পাবে। তাই, টিকে থাকতে হলে প্রতিনিয়ট আপ টু ডেট থাকতে হবে।

শেষ কথা

আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে ডিজিটাল মার্কেটিং এর ভবিষ্যৎ কী তা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য আলোচনা করেছি। এছাড়াও, ডিজিটাল মার্কেটিং সেক্টর প্রতিনিয়ত কী পরিমাণে বৃদ্ধি পাচ্ছে সেটি সম্পর্কে ধারণা দেয়ার চেস্টা করেছি। ডিজিটাল মার্কেটিং এর ফিউচার যদি বর্তমান অবস্থার উপরে যাচাই করা হয় তবে অনেক সম্ভাবনার দেখা মিলে। তাই, আপনি যদি এই সেক্টরে টিকে থাকতে চান এবং একজন ডিজিটাল মার্কেটার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে চান, তবে অবশ্যই নিজেকে আপডেট রাখতে হবে।