বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং হলো অনলাইনে উপার্জনের সবচেয়ে নিরাপদ মাধ্যম। সারা বিশ্বে অসংখ্য ছোট বড় কোম্পানিতে ফ্রিল্যান্সারদের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর মাধ্যমে আমাদের দেশেও অসংখ্য তরুণ তরুণী স্বনির্ভর হয়ে উঠছে। এ পেশায় প্রতিযোগিতা এত পরিমাণ বেড়ে গেছে যে সফলভাবে টিকে থাকাই বেশ মুশকিল হয়ে গেছে।
ফ্রিল্যান্সিংকে তাই পেশা হিসেবে নিতে হলে, নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতা দিয়ে একটি শক্ত অবস্থান তৈরি করে নিতে হয়। কিন্ত এ ক্ষেত্রে নতুন ফ্রিল্যান্সারদের অনেকেই বুঝতে পারে না কিভাবে তারা ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবে।
ফ্রিল্যান্সিং কী
ফ্রিল্যান্সিং হচ্ছে ইচ্ছে মতো কাজ করা। ফ্রিল্যান্সিং মানে কোন একক প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত না হয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করা।
আপনি যদি ভাবছেন যে ফ্রিল্যান্সাররা কী ভূমিকা পালন করে, উত্তরটি প্রায় সবকিছু। আপনি লেখালেখি, সম্পাদনা, পরামর্শ, বিপণন, ডিজাইনিং, আইসিটি, ভার্চুয়াল প্রশাসন, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি পরিষেবাগুলি থেকে ফ্রিল্যান্সার হিসাবে যে কোনও ক্ষেত্র বেছে নিতে পারেন৷
ফ্রিল্যান্সাররা প্রথাগত 9 থেকে 5 কাজের সেটআপে কাজ করে না। যেহেতু তাদের পেশা চুক্তিভিত্তিক, তাই তাদের অফিসের সময়সূচী অনুসরণ করার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
ফ্রিল্যান্সার কাকে বলে
ফ্রিল্যান্সার হলেন একজন স্ব-নিযুক্ত ব্যক্তি যিনি W-2 কর্মী না হয়েও এক বা একাধিক কোম্পানিকে পরিষেবা প্রদান করতে পারেন। ফ্রিল্যান্সাররা এক সাথে অনেকগুলো প্রজেক্টে কাজ করতে পারে। কারণ তাদের ক্যারিয়ার এবং কাজের চাপ সম্পূর্ণ তাদের নিজেদের উপর নির্ভর করে।
বিভিন্ন ধরিণের ক্রিয়েটিভ কাজ যেমন গ্রাফিক ডিজাইন, কপিরাইটিং, ফটোগ্রাফির ইত্যাদি কাজে ফ্রিল্যান্সাররা সবচেয়ে বেশী পারদর্শী। এছাড়া বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদের কাজ, কন্সাল্টিং,মার্কেটিং এবং সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্টের মতো কাজগুলিও ফ্রিল্যান্সাররা করে থাকে।
ফ্রিল্যান্সাররা কোনো প্রতিষ্ঠানের নিয়োগকৃত কর্মচারী নয়। এজন্যে তাদের ত্রৈমাসিকে কর দিতে হয়। তবে অন্যান্য চাকরীজীবীদের মতো স্বাস্থ্য বীমা কিংবা শেষ জীবনের অবসর ভাতার মত সুবিধাগু্লো ফ্রিল্যান্সিং এ নেই।
আজকের এই আর্টেকেলে আমরা দেখবো, নতুনরা কীভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবে। এছাড়া আমরা এমন ৭টি বিষয়ের উপর আলোচনা করবো্ যেগুলো অনুসরণ করলে আপনি খুব সহজেই একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হয়ে উঠতে পারবেন।
ফ্রিল্যান্সিং এ কীভাবে কাজ করা হয়
ফ্রিল্যান্সাররা সাধারণত এক একটি প্রোজেক্ট এর ভিত্তিতে কাজ করে। প্রজেক্টগুলোর নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকে। যেমন, মাসের শুরুতে একজন ক্লায়েন্ট তার কর্মীকে চারটি অ্যাসাইনমেন্ট দিতে পারে। এবং চুক্তি থাকে যে মাসের শেষে চারটি কাজ একত্রে দিতে হবে। এগুলোর পেমেন্ট প্রজেক্টের ভিত্তিতে হতে পারে আবার ঘন্টা বা দৈনিক চুক্তিতেও হতে পারে। প্রজেক্ট এর মেয়াদ শেষ হলে ক্লায়েন্ট চাইলে মেয়াদ বৃদ্ধি করতে পারেন অথবা ওই ফ্রিল্যান্সারকে অন্য প্রজেক্টে যুক্ত করতে পারেন। এটা নির্ভর করে ক্লায়েন্ট এর সাথে সম্পর্কের উপর।
ফ্রিল্যান্সিং-এ ক্যরিয়ার গঠন অপেক্ষাকৃত সহজ হয়। কারণ এখানে দক্ষতা বৃদ্ধির সুযোগ বেশি। একজন ক্লায়েন্ট যদি আপনাকে ফিরিয়ে দেয়, সাথে সাথে আপনি অন্য ক্লায়েন্টদের কাছে যেতে পারবেন।
সফল ফ্রিল্যান্সার হবার ৭টি মূলমন্ত্র
১। ক্যারিয়ার হিসেবে ফ্রিল্যান্সিং উপযুক্ত কিনা তা বিবেচনা করা
ফ্রিল্যান্সিং পেশাতে যেমন সুবিধা আছে তেমনি অসুবিধাও রয়েছে। এজন্যে প্রথমে মনস্থির করতে হবে আপনি কি পার্ট-টাইম ফ্রিল্যান্সিং করতে চান, নাকি ফুল-টাইম পেশা হিসেবে নিতে চান। ফ্রিল্যান্সিং এর অনেকগুলো ফিল্ড আছে। যেমন, লিড জেনারেশন, আর্টেকেল রাইটিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন ইত্যাদি। আপনি কোন ফিল্ডে পারদর্শী তা ঠিক করতে হবে।
একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হবার প্রথম শর্ত হলো নিয়মানুবর্তিতা। কারণ এখানে আপনি নিজেই নিজের বস। এখানে যেমন আপনার কাজের সময়সূচি নিজেই নির্ধারণ করতে পারবেন তেমনি আবার নিজের ইচ্ছামত যে কোন দিন কাজ বন্ধও রাখতে পারবেন। তাই আপনি যদি কাজের প্রতি নিয়মনিষ্ঠ না হন, তাহলে কখনোই সফল হতে পারবেন না।
এছাড়া আপনাকে অবশ্যই সব সময় রুটিন অনুযায়ী চলতে হবে। প্রতিদিনের কাজ ওইদিনের রুটিন অনুযায়ী করতে হবে। একসাথে কয়েকটি প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করার মানসিকতা থাকতে হবে এবং কাজের ধারা অব্যাহত রাখার জন্যে নিয়মতি নতুন নতুন প্রজেক্ট অনুসন্ধান করতে হবে।
ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলোতে নিজের অবস্থান দীর্ঘ সময়ের জন্য ধরে রাখা খুব কঠিন। এজন্যে প্রয়োজন নতুন নতুন কাজ শেখার আগ্রহ, কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি করা, ক্যারিয়ারে উন্নতি করার দৃঢ় সংকল্প এবং আকাশসম ধৈর্য্য। তবেই আপনি সফল ফ্রিল্যান্সার হতে পারবেন।
২। ভালো মানের প্ল্যাটফর্ম এর খোঁজ করা
বেশির ভাগ ফ্রিল্যান্সার কাজের জন্য ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহার করে । এক্ষেত্রে upwork, fiverr, freelancer.com ইত্যাদি বেশি জনপ্রিয়। এছাড়া LinkedIn এর মত সোশ্যাল মিডিয়া চ্যানেলও অনেক জনপ্রিয়। কারণ এই প্ল্যাটফর্মগুলো থেকে সবসময় কাজ পাওয়া যায় এবং ক্লায়েন্টদের সাথে খুব সহজেই যোগাযোগ করা যায়। এছাড়াও এই প্ল্যাটফর্মগুলির নিজস্ব কিছু বিধি বিধান ও শর্তাবলী আছে। ফ্রিল্যান্সার এবং ক্লায়েন্ট উভয়কেই এই শর্তাবলী মেনে চলতে হয়। এমনকি প্রতিটি প্রজেক্ট এর জন্যে যে ছোট ছোট চুক্তি করা হয় সেগুলো উভয়কেই মেনে চলতে হয়। এ কারণে এই প্লাটফর্মগলো সবার জন্যেই নিরাপদ ও আস্থাশীল হয়ে উঠেছে।
অনেক ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট আছে যেখানে খুবই কম সম্মানীর বিনিময়ে ফ্রিল্যান্সারদের দিয়ে নিম্নমানের কাজ করিয়ে নেয়। এভাবে বায়ার যেমন ভালো ফ্রিল্যান্সার খুজে পায় না, তেমনি ফ্রিল্যান্সাররাও ভালো ভাবে উপার্জন করতে পারে না। এজন্যে আপনার উচিত আপনার প্রয়োজন ও প্রত্যাশিত সম্মানীর সাথে মানান সই, এমন প্লাটফর্ম খুঁজে বের করা।
আবার কিছু প্ল্যাটফর্ম আছে যেমন Hiremotely যারা শুধুমাত্র দক্ষ ফ্রিল্যান্স সফ্টওয়্যার ডেভেলপারদের নিয়োগ দেয়। এই ধরনের একচেটিয়া প্ল্যাটফর্মের সদস্য হতে পারলে ভালো ক্লায়েন্টদের সাথে কাজ করা যায় এবং দক্ষতার ভিত্তিতে ভালো পারিশ্রমিকও পাওয়া যায়।
৩। প্রোফাইল তৈরি করা
ভালো প্রোফাইল তৈরি না করে ক্লায়েন্টের সাথে যোগাযোগ করা উচিত নয়। কারণ আপনার শিক্ষা দক্ষতা, এক কথায় আপনার যোগ্যতা আপনার প্রোফাইলে প্রতিফলিত হবে।
বেশিরভাগ ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইটগুলোতে একটি পূর্বনির্ধারিত টেমপ্লেট থাকে। এ কারণে প্রোফাইল তৈরীর সময় কোনো ক্লাসিক্যাল সিভির প্রোয়োজন হয় না। শুধু টেমপ্লেট গুলো প্রোয়োজনীয় তথ্য দিয়ে পূরণ করলেই হয়। প্রোফাইলে আপনার শিক্ষা, দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বর্ণনা করুন। তবে খেয়াল রাখতে হবে, তথ্যগুলো যেন উপন্যাসের মত না হয় বরং তা হবে সাজানো গোছানো এবং সংক্ষিপ্ত। ক্লায়েন্টের প্রজেক্টের জন্যে আপনি নিজেকেই কেন সেরা ভাবছেন, সেটা বোঝানোর জন্যে আপনার দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং বিশেষ অর্জনগুলো সুন্দর ভাবে গুছিয়ে উপস্থাপন করতে হবে।
৪। পোর্টফোলিও তৈরি করা
পোর্টফোলিও হচ্ছে একটি দোকানের পণ্য যেভাবে সাজিয়ে রাখে তার মতো। দোকানের পণ্য ভালো হলে কাস্টমার আসবে অন্যথায় কাস্টমারও আসবে না। সুতরাং প্রোফাইল তৈরি করার সময়, এমন ভাবে তৈরী করতে হবে যেন তা আপনার দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার চিত্র তুলে ধরে। উদাহরণস্বরুপ আপনার প্রোফাইলে বলা হতে পারে যে আপনি একজন মহাকাশচারী, কিন্তু আপনি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে আপনার সেলফি আপলোড না করলে, সম্ভাব্য ক্লায়েন্টরা আপনাকে বিশ্বাস করবে না।
আপনি যদি কাজের ক্ষেত্রে নতুন হয়ে থাকেন, তাহলে কিছুদিন সময় নিয়ে আগে কাজের একটা স্যাম্পল তৈরী করে তারপর সেটিকে পোর্টফোলিওতে যোগ করুন। এছাড়া কম রেটে শুধু অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্যে ও কিছু কাজ করতে পারেন।
৫। কাজের মূল্য নির্ধারণ করা
কাজের জন্যে ঘন্টা প্রতি আপনার রেট কত হবে, প্রতিটা প্রজেক্ট এর জন্যে কত মূল্য হবে, সেটা নির্ভর করবে আপনার দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার হার কেমন তার উপর। যে সকল ফ্রিল্যান্সারদের এক দশকের কাজের অভিজ্ঞতা আছে তাদের রেট অবশ্যই বেশি হবে। অপরদিকে যারা মাত্র কয়েক বছর কাজ করছে, তাদের রেট কম হবে এটাই স্বাভাবিক।
তবে আপনি যদি ফ্রিল্যান্সিংকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করতে চান এবং নিয়মিত কাজ করেন তাহলে দৈনন্দিন খরচ মেটানোর মত যথেষ্ঠ পরিমাণ অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।
৬। যোগ্যতার সাথে প্রাসঙ্গিক কাজের খোজ করা।
এখন আমরা কিছু টিপস নিয়ে আলোচনা করবো যেগুলো আপনকে ভালো প্রজেক্ট এবং ভালো ক্লায়েন্টদের খুঁজে পেতে সাহায্য করবে।
- শুধুমাত্র সেই কাজের জন্য আবেদন করবেন যেগুলি করতে পারবেন বলে আপনি আত্মবিশ্বাসী। সময়মতো শেষ করতে পারবেন না এমন ধরণের কাজের জন্যে আবেদন করাও উচিত নয়। কারণ নতুন ফ্রিল্যান্সারদের জন্যে ক্লায়েন্ট এর পজিটিভ ফিডব্যাক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পজিটিভ ফিডব্যাক পরবর্তী প্রজেক্ট পেতে সাহায্য করে।
- যে ধরণের কাজ করতে চান তার সাথে প্রাসঙ্গিক একটি কভার লেটার তৈরী করতে হবে। এই কভার লেটারটিতে আপনার দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা হাইলাইট করে ব্যাখ্যা করবেন কেন আপনি নিজেকে এই কাজটির জন্যে যোগ্য প্রার্থী ভাবছেন।
- কিছু ফ্রিল্যান্সার অনলাইন মার্কেটপ্লেসে কাজ করতে চায় না কারণ এখানে মূল আয়ের ৫% থেকে ২০% কেটে নেয়া মার্কেটপ্লেসের ফি হিসেবে। সেক্ষেত্রে তারা ফেসবুক এবং লিঙ্কডইন-এর বিভিন্ন গ্রুপকে কাজ খোঁজার জন্যে ব্যবহার করে। তবে এই গ্রুপগুলোতে ক্লায়েন্টের সাথে কোনো চুক্তি কিংবা গ্যারান্টি থাকে না। যে কেউ আপনাকে ঠকাতে পারে। কাজ করিয়ে নেবার পর পেমেন্ট নাও দিতে পারে। এক্ষেত্রে অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোই বেশি নিরাপদ।
৭। ক্লায়েন্ট এর সাথে সম্পর্ক কেমন হবে তার উপর ফোকাস করা
ফ্রিল্যান্সিংয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ক্লায়েন্টদের সাথে আপনার সম্পর্ক কেমন। বর্তমান ক্লায়েন্টদের সাথে যদি আপনি ভাল যোগাযোগ বজায় রেখে মানসম্পন্ন কাজ প্রদান করতে পারেন, তাহলে ভবিষ্যতে আরও বেশি বেশি প্রজেক্ট পাওয়ার নিশ্চিত সম্ভাবনা থাকবে।
ক্লায়েন্টের দেয়া সব ধরণের নির্দেশাবলী মেনে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে। এমনকি কাজ শেষ হবার পরও ক্লায়েন্টের কোন প্রশ্ন বা অনুরোধ থাকলে অবশ্যই তা মানতে হবে। একজন ফ্রিল্যান্সার হিসাবে্ আপনার রেপুটেশন ভালো রাখার জন্যে ক্লায়েন্টকে আপনার সেরা কাজটি দিতে হবে
এছড়া, আপনি নতুন ক্লায়েন্টদের আকৃষ্ট করার জন্যে পোর্টফোলিও তৈরি করতে পারেন। কারণ নতুন নতুন ক্লায়েন্ট পাওয়া একটু কঠিন তবে পুরাতন ক্লায়েন্টকে ধরে রাখা আবার সহজ। দীর্ঘদিন একসাথে কাজ করার সুবাদে পুরাতন ক্লায়েন্ট ইতিমধ্যেই আপনার মেধা ও দক্ষতা সম্পর্কে ভালো ধারণা পেয়েছে। তাই সেই ক্লায়েন্ট এর পরবর্র্তী প্রজেক্টগুলোতে আপনাকে নেয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
সামাজিক মিডিয়া এবং আপনার ওয়েবসাইটে আপনার কাজের বিজ্ঞাপন দিতে পারেন। তবে এগুলো নিয়মিত আপডেট করতে হবে। অনলাইন জগতে আপনার ডিজিটালি উপস্থিতিটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এখান থেকেই ক্লায়েন্টরা আপনাকে চিনতে পারবে এবং বিশ্বাস করবে।
ফ্রিল্যান্সিং এর সুবিধা
পেশা হিসেবে ফ্রিল্যান্সিং এর যেমন উপকারী দিক আছে তেমনি কিছু অপকারী দিকও আছে। প্রথমে আমরা ফ্রিল্যান্সিং এর ভালো দিক বা সুবিধাগুলো নিয়ে আলোচনা করবো।
- অন্যান্য সকল পেশার তুলনায় ফ্রিল্যান্সিং এ কাজের স্বাধীনতা বা নমনীয়তা অনেক বেশী।
- এখানে সবসময় কাজের সুযোগ থাকে। প্রতি ঘন্টায় ফ্রিল্যান্স প্ল্যাটফর্মগুলিতে কয়েক ডজন নতুন কাজের অফার যোগ হয়।
- আপনি আপনার সময়সূচী নির্ধারণ করতে পারবেন। আপনি যখন ইচ্ছা, যেভাবে ইচ্ছা এবং যতক্ষণ ইচ্ছা কাজ করতে পারবেন। আপনাকে ছুটির দিনের জন্যে অপেক্ষা করতে হবে না।এমনকি আপনি চাইলে সারারাত কাজ করতে পারবেন। সকালে উঠার তাড়া থাকবে না।। ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে আপনার মেধা ও যোগ্যতার সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারবেন। অফিস টাইমের মধ্যে জীবনকে সীমাবদ্ধ করতে হবে না।
- ফ্রিল্যান্সাররা যেকোনো সময় যেকোনো জায়গা থেকে কাজ করতে পারে। এমনকি ফুল-টাইম চাকরির পাশাপাশি অতিরিক্ত আয়ের জন্যও ফ্রিল্যান্সিং করা যায়।
- এখানে অভিজ্ঞতা অর্জনের অনেক সুযোগ রয়েছে । বিভিন্ন প্রজেক্টে বিভিন্ন ক্লায়েন্টের সাথে কাজ করে বিভিন্ন ধরণের অভিজ্ঞতা অর্জন শুধুমাত্র ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরেই সম্ভব।
- আপনি কার সাথে কাজ করবেন তা বেছে নিতে পারবেন। যদি কোনও ক্লায়েন্টের সাথে কাজ করতে ভালো না লাগে আপনি খুব সহজেই অন্য একটি কাজ খুঁজে নিতে পারবেন।এখানে চাকরি হারানোর ভয় নেই। শুধুমাত্র ক্যারিয়ার এর জন্যে ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিংবা ক্লায়েন্ট এর সাথে খারাপ সম্পর্ক নিয়ে কাজ করতে হবে না।
ফ্রিল্যান্সিং এর অসুবিধা
যদিও ফ্রিল্যান্সিং এ পছন্দ করার অনেক বিষয় আছে, এর কিছু খারাপ দিকও রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে:
- আপনাকে নিয়মানুগ এবং রুটিন অনুযায়ী চলতে হবে। আপনি যদি একজন ভাল ফ্রিল্যান্সার হতে চান তবে আপনাকে নিজের প্রতি কঠোর হতে হবে এবং স্ব-প্রণোদিত হয়ে কাজ করতে হবে।
- কমোনিকেশন স্কিল বাড়াতে হবে। যেহেতু ফ্রিল্যান্স প্লাটফর্মগুলোর বেশীরভাগ ক্লায়েন্টই বিদেশি, তাই তাদের সাথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে ইংরেজী। আপনাকে ইংরেজীদের এক্সপার্ট হবার দরকার নেই। যোগাযোগ করার মত নরমাল ইংরেজী জানলেই হবে।
- মঝে মাঝে এমন সময় আসবে যখন আপনি প্রয়োজনের তুলনায় বেশি প্রজেক্ট পাবেন, আবার এমন সময়ও আসবে যখন হাতে কোনো কাজই থাকবে না। এ ধরণের সমস্যা মোকাবেলা করতে হলে ক্লায়েন্টের সাথে আগে থেকেই সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।
- কখনও কখনও আপনাকে কাজের প্রেসার অনেক বেশী হতে পারে। তখন কাজের ধারা বজায় রাখতে আপনাকে একটানা দীর্ঘ সময় কাজ করা লাগতে পারে।
- আপনার প্রথম প্রজেক্ট পেতে একটু সময় লাগতে পারে। এজন্যে কাজ পেতে দেরি হলে হতাশ হবেন না।. সাধারণভাবে, তিন মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত সময় লেগে যায় ক্লায়েন্ট এর সাথে সংযোগ তৈরী করতে। কিন্তু একবার কাজ শুরু করতে পারলে একজন ফ্রিল্যান্সার হিসাবে আপনার কর্মজীবন শুরু করতে পারবেন।
সফল হতে হলে আপনার দূর্বলতাগুলোকে চিহ্নিত করতে হবে এবং সেগুলোকে উন্নত করার চেষ্টা করতে হবে। নিজের দুর্বল জায়গাগুলোকে মেরামত করে সেগুলোকে পুরোপুরি প্রফেশনাল এর মত করে গড়ে তুলতে হবে। সবশেষে বলা যায়, সফল ফ্রিল্যান্সার হবার মূলমন্ত্র হলো দক্ষতা, ধৈর্য্য এবং আত্মবিশ্বাস। আপনি যদি সকল দুর্বলতাগুলোকে পাশ কাটিয়ে নিজের মেধা আর যোগ্যতার প্রমাণ ক্লায়েন্টের কাছে দিতে পারেন , তবেই আপনি হয়ে উঠবেন সফল ফ্রিল্যান্সার দের একজন।
আপনার লেখাটি মনোযোগ সহকারে পড়লাম। খুব ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আপনাকে